কুষ্টিয়ার বিশিষ্ট লেখক, গবেষক ও প্রাবন্ধিক ড. সারিয়া সুলতানা সাংবাদিকের সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন,কুষ্টিয়ার মানুষের প্রতি ভালোবাসার কারণেই আমি ও আমার জীবনসঙ্গী কুষ্টিয়ার ইতিহাস লেখার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠি।
তিনি বলেন,আমরা ঐতিহ্যবাহী কুষ্টিয়াকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।আমরা এব্যাপারে কুষ্টিয়াবাসী সার্বিক সহযোগিতা ও দোয়া চাই।আমরা কুষ্টিয়াবাসীর সার্বিক মঙ্গল কামনা করছি।
তিনি বলেন,আমি গবেষণা করছি কুষ্টিয়ার ইতিহাস নিয়ে। স্কুল, কলেজের পড়াশোনাটা কুষ্টিয়া জেলার বাইরেই হয়েছে। অনার্স এবং মাস্টার্স সম্পন্ন করেছি কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগ হতে। পিএইচডি সম্পন্ন করি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় হতে। ছোটবেলা থেকেই কুষ্টিয়ার প্রতি ছিল অদম্য টান। কলেজ জীবন থেকেই সাহিত্য পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পড়াশোনা। কুষ্টিয়াকে নিয়ে প্রথম কাজ শুরু করি ২০০২ সাল থেকে। আমি ও আমার জীবনসঙ্গী কুষ্টিয়া জেলার ইতিহাস নিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছরের অধিক সময় বিভিন্ন উপজেলায় সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। জানা অজানা বিভিন্ন গুণী মানুষের গুণকীর্তন মানুষের কাছে শুনেছি, তারই এক বাস্তব প্রতিফলন ‘কুষ্টিয়ার ইতিহাস’ গ্রন্থে তুলে ধরেছি। ২০১৮ সালে প্রথম ‘কুষ্টিয়ার ইতিহাস’ প্রকাশ করতে পেরেছি। আলহামদুলিল্লাহ্। ২০২০ সালে এই গ্রন্থের দ্বিতীয় সংস্করণ এসেছে বৃহৎ কলেবরে ৮৩২ পৃষ্ঠায় আমাদের প্রকাশনী কণ্ঠধ্বনি হতে এবং ‘ধর্মীয় ইতিহাস স্থাপত্যে কুষ্টিয়া’ এবং ‘দুই বাঙলার নান্দনিক কবিতা’ গ্রন্থটি ১০১ কবি ৩৬৫ কবিতা সম্বলিত সম্পাদিত গ্রন্থ। আমাদের সবগুলো গ্রন্থই গবেষণামূলক। আমাদের স্বপ্ন কুষ্টিয়াকে বিভিন্ন চোখে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা। বিশ্বের দরবারে কুষ্টিয়াকে তুলে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা কুষ্টিয়ার কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও শিল্পী, সংগঠন এবং বিভিন্ন জ্ঞাণীগুণী মানুষের মধ্যে লক্ষ্য করেছি।
তিনি বলেন,রবীন্দ্রনাথ ‘ছিন্নপত্রে’ গড়াই সম্বন্ধে বলেছেন: লেজ দোলানো কেশর ফোলানো ঘার বাঁকান তাজা বুনো ঘোড়ার মতো। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর জীবনের অনেকগুলো দিন কাটিয়েছেন গড়াই-পদ্মা নদীর তীরে। গড়াই নদীকে কবি লিখেছেন গৌরী নামে, গড়াইয়ের নদীতীরের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের কথা তাঁর কবিতায় ফুটে উঠেছে অত্যন্ত নান্দনিক ভাবে-গোড়াই নদীর চর/নূতন ধানের আচল জড়ায়ে ভাসিছে জলের পর/একখানা যেন সবুজ স্বপন একখানা যেন মেঘ/আকাশ হইতে ধরায় নামিয়ে ভুলিয়াছে গতিবেগ।…
তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৪৭ সালের ১৬ আগস্ট র্যাডক্লিফ রোয়েদাদ ঘোষিত হলে বৃহত্তর নদীয়া জেলার চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর মহকুমার কিছু অংশসহ কুষ্টিয়া মহকুমার সমগ্র অঞ্চল পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং এই জেলার প্রথম জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নাসির উদ্দিন আহমেদ ১৯৪৭ সালের ১৮ আগস্ট নবগঠিত জেলার নাম দেন নদীয়া জেলা। অপরদিকে পশ্চিমবঙ্গের বিভক্ত নদীয়া নবদ্বীপ জেলা নামে পরিচিতি পায়। কিন্তু প্রথম থেকেই প্রশাসনিক কাজে চিঠিপত্র আদান প্রদানে জটিলতা সৃষ্টি হলে ১৯৪৭ সালের আক্টোবর মাসে নদীয়া জেলা পরিবর্তন করে কুষ্টিয়া জেলা। নামকরণ করেন পরবর্তী জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মুর্তজা আলী। কুষ্টিয়া জেলার প্রাচীনতম স্থান কুমারখালী। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে এখানে একজন কর্মাশিয়াল রেসিডেন্সে বাস করতেন। সে সময়ে কলকাতার বাজারে ঈড়সসবৎপরধষষু ঋবধঃযবৎং নামে হারগিলা পাখির পালক বিক্রি হত। ইংরেজ রমনীরা এই পালক সমাদরে ক্রয় করতেন। যার উৎস ছিল এই কুষ্টিয়া অঞ্চল। কুষ্টিয়ার এই পূণ্যভ‚মিতে জন্মেছেন বহু খ্যাতিমান মনীষী। যাদের অবদান কুষ্টিয়াকে করেছে গৌরবান্বিত।
লেখক, গবেষক ও প্রাবন্ধিক ড. সারিয়া সুলতানা এর সংক্ষিপ্ত জীবনচরিত
জন্ম: ৮ জানুয়ারি ১৯৮২
শিক্ষা: অনার্স (প্রথম শ্রেণিতে প্রথম), লোকপ্রশাসন বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়; মাস্টার্স লোকপ্রশাসন); পিএইচডি (সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়)
পিতা: আ স ম আব্দুর রাজ্জাক
মাতা: রহিমা বেগম
স্বামী: ড. মুহম্মদ এমদাদ হাসনায়েন
কন্যা: মেহজাবীন মুমতাহিনা
স্থায়ী ঠিকানা: কপোতাক্ষ, ৭/৩ খ. সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন সড়ক, কাটাইখানা মোড়, কুষ্টিয়া
ই-মেইল: hello.kobadak@gmail.com
ফোন: ০১৭১৯১৮৫১৩০; বাসা (০৭১-৬৩২৬৪)
পেশা: চাকুরি
লেখালেখি: প্রবন্ধ, ইতিহাস ও গবেষণামূলক গ্রন্থ
গবেষণামূলক গ্রন্থ: ‘কুষ্টিয়ার ইতিহাস’ এবং ‘ধর্মীয় ইতিহাস স্থাপত্যে কুষ্টিয়া’
সম্পাদিত গ্রন্থ: ‘দুই বাঙলার নান্দনিক কবিতা’ ১০১ কবি ৩৬৫ কবিতা
প্রবন্ধ: ৬টি
ফেলোশিপ: সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়
সম্মাননা:
১. আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা পদক, ঢাকা, ২০১৮
২. কুষ্টিয়া গুণীজন সংবর্ধনা, কুষ্টিয়া, ২০১৮
৩. প্রাপ্তি গ্রন্থপদক সম্মাননা, কুষ্টিয়া, ২০১৮
৪. আলোকিত নারী সম্মাননা, ঢাকা, ২০১৯
৫. ভালোবাসার কুষ্টিয়া গুণীজন সংবর্ধনা, কুষ্টিয়া ২০১৯
৬. আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক, ঢাকা, ২০২০
লেখক, গবেষক ও প্রাবন্ধিক ড. সারিয়া সুলতানা
বিশিষ্ট সাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায় কুষ্টিয়া প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘আমার শেষ জীবন কাটাতে চাই কুষ্টিয়া জেলায়, বাংলাদেশের হৃদয় যেখানে।’ সেই কুষ্টিয়াকে নিয়ে লিখেছেন ‘কুষ্টিয়ার ইতিহাস’ গবেষণামূলক গ্রন্থ ড. সারিয়া সুলতানা। নান্দনিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন