একজন সাধারণ বয়স্ক রোগীদের জন্য একজন বিসিএস ডাক্তারের আবেগঘন স্ট্যাটাস।
মোঃ রেজাউর রহমান তনু, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:-কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর মেডিকেল অফিসার ডাক্তার শুভাশীষ সাহা শুভ তার ফেসবুক ওয়ালে বয়স্ক এক রোগী কে নিয়ে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন।ডাক্তারের আবেগঘন স্ট্যাটাস টি আপনাদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হল
প্রচন্ড মন খারাপ নিয়ে লিখছি।
গত মাসখানেক আগে আউটডোরে রোগী দেখছি। একটু রোগীর ভীড়ই ছিল সেদিন আউটডোর। সাধারণত সরকারি হাসপাতালের একটা বড় সংখ্যক রোগী আসেন তাদের পছন্দমত ঔষধ নিতে। কেউ এসে ঔষধের নাম বলেন বা ঔষধের স্ট্রিপ দেখান, কেউবা বানিয়ে বানিয়ে উপসর্গ বলতে থাকেন। এর ভীড়ে প্রকৃত রোগী কমই থাকে। সে আলোচনা মুখ্য নয়।
এমন এক মাঝারি ভীড়ের মাঝে আমাদের হাসপাতালের একজন স্টাফ একজন ৫৫ বছরের ভদ্রমহিলাকে তার আত্মীয় পরিচয়ে দেখে দেবার অনুরোধ জানান। বয়স ৫৫ বললেও আদতে কিছু বেশিই হবে। মাঝেমধ্যেই তার গায়ে গায়ে জ্বর, গায়ে-হাটুতে-কোমড়ে ব্যথা। সকালে ঘুম থেকে উঠলে ব্যথা বাড়ে। কিন্তু এখন তিনি এসেছেন তীব্র মাথা ব্যথা নিয়ে। কপালের এক পাশে তীব্র ব্যথা। তার নিজের বর্ননায় ‘ফু দিলেও ব্যথা লাগছে বলে মনে হচ্ছে’। ডায়বেটিস আছে, ঔষধ খান, উচ্চ রক্তচাপ নেই।
আমি তাকে Temporal Arteritis এর রোগী মনে করলাম। আগে থেকেই তিনি Polymyalgia Rheumatica তে হয়তো ভুগছেন বলে ধারণা করলাম। তাকে বললাম ‘এইরোগটা খারাপ, ঔষধ দিচ্ছি খাবেন আর একটা পরীক্ষা করে আজকেই বিকালে আমাদের ইমার্জেন্সিতে দেখাবেন। ডায়বেটিসও মাপতে হবে।’
রোগীকে ঔষধ দিলাম, চলে গেলেন। আউটডোর শেষে এই রোগীর কথা সিনিয়র ডা. রুবেল ভাই আর ডা. রাহুলকেও বললাম, কেননা এমন ক্লিনকাট কেস পাওয়া টাফ। ভাইকে জিজ্ঞাসাও করলাম হাই ডোজ স্টেরয়েড দিলাম ডায়বেটিস কতটুকু বাড়বে, কিভাবে ম্যানেজ করবো একটু আলোচনাও হলো। তারপর ভুলে গেছি।
আজ এই মাসখানেক পরে আমাদের হাসপাতালের সেই স্টাফ ফোন দিয়েছেন, জিজ্ঞাসা করছেন ঢাকাতে একজন ভালো চক্ষু বিশেষজ্ঞের নাম। কারণ জিজ্ঞাসা করতেই তিনি সেদিনের ঘটনা মনে করিয়ে বললেন, সেই রোগী আমার দেওয়া ঔষধ খায় নি। কিনে নিয়ে গিয়েছিল কিন্তু একজন তাকে বলেছে ‘এই ঔষধ মাথা ব্যথার ঔষধ না। এই ঔষধ খাইলে হাত পায়ে পানি আসবে, ডায়বেটিস বেড়ে অসুস্থ হবেন, পরে ডাক্তার বলবে ইনসুলিন লাগবে, একবার ইনসুলিন নিলে আর ঔষধ কাজ করবে না ইত্যাদি। এসবই আমাদের ব্যবসা। আমরা যারা নতুন আমাদের অভিজ্ঞতা কম, তাই এইসব ঔষধ লেখি।’ তিনি রোগীকে ব্যথার ঔষধ আর গ্যাসের ঔষধ দিয়েছে, দুইবেলা ইঞ্জেকশন দিয়েছে। তার সপ্তাহখানেকের মধ্যে একদিন সকালে রোগী উঠে বুঝতে পারলো সে এক চোখে আর দেখতে পারছে না। এর পর রাজশাহীতে দেখিয়েছে, খুব একটা উন্নতি হয় নি তাই ঢাকায় যাবে।
আমি এপর্যন্ত শুনে আর কিছুই বললাম না, বললাম ঢাকাতে আমার পরিচিত কম। কেটে গেল ফোন।
আমার মেডিসিনের জ্ঞান খুব কম এটা সত্য, কিন্তু এভাবে একজন মানুষের চোখ নষ্ট হয়ে গেল এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। কী লাভ এতো পড়ালেখা, এতো আয়োজনের