আশাজাগানিয়া কুউপ মেলা
“জয়তু ত্রি-নক্ষত্র!
তোমরা থাকো মানবকল্যানে যুগান্তর….”
এক টুকরো মনোরম পরিবেশে বিনোদন! এটার জন্যে আমরা ভেড়ামারাবাসী চাতকের ন্যায় চেয়ে থাকি, উদাস মনে কামনা করি।
শুধুমাত্র এক টুকরো বিনোদন। আগামীর প্রজন্ম আমাদের ঘরে, তাদের জন্য এটা বড্ড প্রয়োজন।
কিন্তু আমরা এটুকু দিতে ব্যার্থ হচ্ছি। আমার রাজকন্যা ‘রূপকথা’ মাঝে মধ্যে বিস্ময় প্রকাশ করে বলে, আব্বু মেলা কেন হচ্ছে না? অনেক দিন হয়ে গেলো কতদিন মেলা-তে কিছু কিনি-না!
তোমরা-ত সাংবাদিক, আব্বু তোমরা মেলা করো-না! মেয়ের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিতে পারিনি তখন।
কেনো?
কিসের জন্য আমাদের এই ব্যার্থতা?
আজ আমি সেদিকে যাবো না।
আমার পরিবার নিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় ভেড়ামারা উপজেলা পরিষদ চত্বরে তিনদিনের কুউপ (কুষ্টিয়া অনলাইন উদ্যোক্তা পরিবার)উদ্যোক্তা মেলায় গিয়েছিলাম।
সকাল থেকেই আমার রাজকন্যা রূপকথার প্রস্তুতি চলছিলো আমার গিন্নিত বিশ্বাস করতে পারছে না, যে নিয়ে যাব কিনা।
তবে মনে মনে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল, বুঝলাম মেলায় কিনা-কাটা করা দেখে।
যা হোক বাড়ি থেকে বেড় হয়ে রিকশার জন্য রাস্তায় দাড়াতে মা-মেয়ের আপত্তি, রিকশা লাগবে না।
বিস্মিত হলেও টাকা বেঁচে যাচ্ছে এই ভাবনায় ভালোলাগাবোধ ভাব এসে গেলো।
একটু এগিয়ে যেতেই কারণ জানতে চাইলে রোমাঞ্চকর নয়নে স্পেশাল কন্ঠে বলে উঠলো পাশাপাশি হাতেহাত, একটু আধটু চোখে চোখ রাখা… তারপর তোমার এত রোমান্টিকতার কথাবার্তা তোমার মুখে আমাকে স্পেশাল ডাকে ডাকা এগুলো কি রিকশায় চড়লে পেতাম।
মনে হচ্ছে বহুদিন তুমি আমাকে এথেকে বঞ্চিত করে রেখেছো! কথাগুলো আমার গিন্নির!
এরপর হঠাৎ কোলাহল বাড়তে লাগলো নিজে একটু ভাবি রাস্তাটা আর একটু লম্বা হলে ভালো হতো।
দু’জনের এমন রোমাঞ্চকর পরিবেশ কতদিন পর তা মনে করার চেষ্টা করতে হাতে ঝাঁকুনী, রূপকথার উচ্ছ্বাস ভরা কন্ঠে বলে ওঠা, আব্বু যা চাই তাই কিনে দেবে কিন্তু। আর অনেকক্ষণ থাকবো বলে দিলাম কিন্তু।
আমার রাজকন্যা -ত মেলার সব জিনিস কিনে বাড়ি ফিরবে এমন ভাব।
অনেক ব্যক্তিগত কথা-ত লিখলাম, মেলায় এসে কি পেলাম সেকথায় এবার আসি। প্রথমে মেলা চত্বরে ঘুরেফিরে দেখলাম। এরপর কেনাকাটা পর্ব শুরু।
রূপকথা ও আমার গিন্নি অনেক ক্ষন ধরে পছন্দ করে তাদের পছন্দের জিনিসগুলো কিনে ফেললো।
কিন্তু এত বড় একটি মেলা তার উপর এই কুউপ মেলাতে এত চমৎকার সব পণ্য যা একেকটি কুউপ উদ্যোক্তা তাদের “মেধা ও চিন্তার” ফসল যেন সাজিয়ে রেখেছে, সত্যিই অতুলনীয়।
আমার সহধর্মিণী ‘সুপ্রিয়া’ ত লোভ সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে, কোনটা রেখে কোনটা নিবে।
একটি পর্যায়ে সে তার বাজেট শেষ করে আমার মানিব্যাগে হাত বাড়ালো আমিও তার মুডকে নষ্ট করতে চাইলাম না।
তারপরও সে যেনো কি বলতে চায়।
আমি ব্যাপারটি বুঝে গিয়ে নির্বাক।
সালমান শাহ ভাব ছেড়ে দিয়ে
ইউটার্ন। না-হ কেমন যেনো তার মুখটা একরাশ কালোমেঘ ভর করছে!
বাড়ি যেতে যেতেই পথে তুমুল বেগে ঝড় উঠবে। হয়তোবা বাড়িতে গিয়ে ঝরবে, দু অশ্রুর অঝোরে শ্রাবন..! ভাবছি আর তার দিকে তাকাচ্ছি, সে শুধু মেলায় আরো অনেক প্রকার জিনিসপত্র দেখছে আর দাম জিঙ্গেস করছে।
এবার কাছে এগিয়ে যেতেই, চাপা গলায় বলে উঠলো, মেয়ের জন্য টাকা বেড় করতে একটুও সময় নাও না! আমার বেলায়..।
আর না।
কাছে গিয়ে মিষ্টি সুরে বললাম জানু তুমি এ গুলো কি নিবে? একরাশ গভীর কালো মেঘ গিন্নীর মুখ থেকে নিমিষেই সরে গিয়ে, হয়ে গেল পুর্নিমার চাদ! দিলাম কিনে।
আমি বুঝলাম এ কুউপ মেলায় মেধাবীদের মননের পরম যত্নে গড়া নিত্য নতুন এসব পণ্য কতটা আকর্ষণীয় ও লোভনীয়!
আমারই লোভ হচ্ছে নেওয়ার আর আমার ওর হবেনা।
আসলে এসবের কৃতিত্ব এসব কুউপ উদ্যোক্তার।
সুযোগ দিলে এদেশের নারী পুরুষ, তরুণ, তরুণী কত সুন্দর আইডিয়া বেড় করে হরেক রকম পণ্যের সমাহারে বাজার ভরিয়ে তুলতে পারে।
কত মেধা ছড়িয়ে আছে আমাদের চারিপাশে।
আর এদেরকে যে পথ তৈরী বা চিনিয়ে দিয়েছে, যে পথপ্রদর্শক তাকে কি আর বলি..
বলা যায় সে বাংলার সোনার ছেলে।
তার জন্য শুভ কামনাই থাকবে। একটি শিল্পর শিল্পীদের সৃষ্টি উন্মুক্ত উন্মোচনে উদ্যোক্তা মেলাটা যথেষ্টই গুরুত্ব বহন করছে শুধু তাই নয়, দর্শনার্থীদের জন্যও শিক্ষনীয়।
যা বাঙ্গালী রুচিবোধ জাগ্রতর জায়গা আরো প্রশস্ত করবে বৈকি।
যে এই উদ্যোক্তাদের স্বপ্নের সারথী হয়েছেন, সেই নন্দিত মহা উদ্যেক্তা যিনি সদুর প্রবাস থেকে সৃষ্টি করে চলেছেন নতুনত্ব সব কর্মযজ্ঞ।
সেই সপ্নপুরুষ উদ্যোক্তা “জীবন রহমান মোহন” কে অসীম ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা ও স্যালুট জানায়।
আর এসবের সফল পরিনতি দেওয়ার নেপথ্যের মহানায়ক মোদের প্রাণ প্রিয় অভিভাবক, ভেড়ামারাসীর বন্ধুবর, আমাদের শ্রদ্ধেয় ও আমার প্রিয় ব্যাক্তিত্ব “ভেড়ামারার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল মারুফ” স্যারের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ এবং অকৃত্রিম, অকৃপণ ভালোবাসা জানাচ্ছি।
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি মেলায় সহযোগীতায় আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসার জন্য নব নির্বাচিত জননন্দিত পৌর মেয়র তারুণ্যের মেধাবী সন্তান আধুনিক পৌরসভার গড়ার উদ্যোক্তা “আনোয়ারুল কবির টুটুল মহোদয়” কে।
“জয়তু ত্রি-নক্ষত্র!
তোমরা থাকো মানবকল্যানে যুগান্তর….”
শেষাংশঃ
প্রিয় পাঠক আমার মানিব্যাগ বরাবরই পাতলা-পুতলা তাই সাধ ও সাধ্যের পরিপূর্ণতার মিলন এখনো অধরা।
আমার সহধর্মিণী এব্যাপারে সজাগ সচেতন এবং বুঝবান। সে, সেভাবেই সে চলতে শিখে গেছে। এ জন্য ওর প্রতি আমার ভালোবাসাটা কৃত্রিম নয়, অন্তরের অন্তস্তলের!
…….তো দোকানে পণ্য হাতে সেগুলোও নেওয়ার খুব ইচ্ছে এসময় ওকে বলি
আমি তোমাকে তোমার এসব পছন্দের জিনিস অন্য দিনে কিনে দিবো।
সে বলে দিবে, কিন্তু মেলা শেষ হলে এগুলো আর পাবো কি?
আমি তাকে বললাম এরা উদ্যোক্তা, অনলাইন উদ্যোক্তা একটি কার্ড নাও ফোন নম্বর আছে তোমার প্রয়োজনে যে জিনিস দরকার যখন খুশি তখনই পেয়ে যাবে এবং সারাবছরই পাবে।
এরা যারা আজ দোকান দিয়েছে, শুধু আজ বেচাকেনার জন্য নয়, তাদের পণ্যের প্রচার ও প্রসারের জন্য। পরিচিতি বাড়ানো আর যাদের প্রতিভা এখনও গুপ্তের বাঁধনে রয়েছে তাদের কাছে একটি একটি সুবার্তা পৌঁছে দেওয়ারই আয়োজন।
একথা শুনে আহ্লাদে, সাথে সাথেই কয়েকটি দোকানের ভিজিটিং কার্ড নিয়ে পরম যত্নে তার ব্যাগে রেখে দিলো।
মুখটায় একরাশ হাসির রেখা একে, হাসি হেসে ও বলল চলো.. এরপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে একটু গান শুনলাম, মেয়েকে বেলুন কিনে দিলাম, “একে সুপার শপ” থেকে আইচক্রিম দুজনের জন্য কিনে দিলাম।
খৈ কিনে এবার ফিরলাম আমার ছোট্ট সুখ নীড়ে.. সফল হোক কুউপ উদ্যোক্তা মেলা, সার্থক হোক উদ্যোক্তরা এগিয়ে যাক বাংলাদেশ।
আমার মুল কথাটা হলো এসব উদ্যোক্তা অনলাইন ভিত্তিক পন্য সরবাহ করে যা আমাদের মত ক্রেতার জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ যা আজ মেলাতে সবকুল রক্ষা পেলো
প্রিয় “জীবন রহমান মোহন’র” মত মহা উদ্যোক্তা মেধাবী দেশপ্রেমিক জন্ম নিক প্রতিটি জেলায় ঘরে ও মায়ের কোলে।
“প্রিয়পাঠক ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন”